ঋণগ্রস্ত কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু নিয়ে বিপাকে

ডেস্ক রিপোর্ট : ঋণের টাকা না দিতে পেরে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ২০১৭ সালে আলুতে ব্যাপক লোকসান হয়। এ কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন। ফলে ব্যাংকের কাছে খেলাপি হয়ে গেছেন। আলুর মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু আগেই খেলাপি হয়ে যাওয়ায় ঋণ নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের সরকারি ব্যাংকগুলোয় ঋণ ২০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে মাত্র ৫ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আমাদের সময়

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালে প্রতিকেজি আলু ১০ থেকে ১৫ টাকায় কিনে ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এতেই ব্যাপক লোকসানে পড়েন ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৪০০ হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী ব্যাংকের কাছে খেলাপি হয়ে গেছেন। সংকটের কথা বিবেচনা করে সরকারি ব্যাংক সুবিধা দিতে রাজি হলেও বেসরকারি ব্যাংক থেকে কোনো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও সরকারি ব্যাংকগুলোর এমডিদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে।

সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণে আরোপিত ও অনারোপিত সুদ ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে। মূল পাওনার ওপর ব্যাংকের কস্ট ফান্ড অথবা ব্যাংকের সর্বনি¤œ সুদ কার্যকর করতে হবে। চলতি বছর থেকে আগামী ২০ বছরের কিস্তিতে ওই টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বকেয়ার ঋণের মাত্র ৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট জমা দেবেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ব্যাংকগুলো গ্রাহক-ব্যাংকার সম্পর্কের ভিত্তিতে এ সুবিধা কার্যকর করবেন। এ সুবিধা দিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আবেদন করতে হবে। কেউ সুবিধা নিয়ে পরপর দুটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক তার সমুদয় পাওনা আদায়ে যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এ সুবিধা গ্রহণকারীদের নতুন করে ঋণ দিতে পারবে না সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।

সম্পূর্ণ কিস্তি পরিশোধের পর ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখা সুদ মওকুফ করা হবে। এ সুবিধা গ্রহণের উপযুক্ত খেলাপি হিমাগারের তালিকা বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ সুবিধা যেন বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রদান করে এ জন্য গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা এখনো দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে অন্তত ১৫০ ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে গেছেন। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ সমিতির প্রথম সহসভাপতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী গোর্কি বলেন, আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে খেলাপি হয়েছি। এখন আলুর মৌসুম চলছে। কিন্তু আমাদের কাছে টাকা না থাকা এবং ব্যাংকের কাছ থেকে নতুন করে ঋণ না পাওয়ায় এ খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এখন আলু সংরক্ষণ করতে না পারলে আলুর দাম কমে যাবে। আলু নষ্ট হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে সংকটের কারণে আলুর দাম অনেক বাড়বে, যা অন্য খাদ্য পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেবে।

তাই কৃষির স্বার্থে ও খাদ্য মজুদ নিশ্চিতে এ মুহূর্তে সুবিধা প্রধান করা জরুরি। কিন্তু অজানা কারণে সিদ্ধান্ত হয়েই কার্যকরে গিয়ে তা আটকে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ঋণখেলাপি হিমাগার মালিকদের ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৭ সালের আগস্টে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে আবেদন করেন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। এর পর এ বিষয়ে গত ডিসেম্বর ও সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সর্বশেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক।

বৈঠকে হিমাগার মালিকরা ছাড়াও সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে, ডাউনপেমেন্ট ও সুদহার কমপক্ষে ১০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়। তবে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ১০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না রুগ্ন হিমাগারের মালিকরা।

তাদের কাছে এ অর্থ নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, আলু সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়েছে। এ বছর ৯৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু খেলাপি হয়ে যাওয়ায় আলু সংগ্রহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আলু না কিনলে আলুর দাম কমে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরাই।

 

এক্সক্লুসিভ রিলেটে

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment